নিজস্ব প্রতিবেদক : নারী ও শিশু নির্যাতন মামলায় বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তাকে জেল হাজতে পাঠিয়ে আদালত।
অভিযুক্তের স্ত্রী সোনালী ব্যাংক কর্মকর্তা মমতাজ বেগমের দায়ের করার মামলায় গতকাল বুধবার রাজশাহী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন টাইব্যুনাল তার অস্থায়ী জামিন বাতিল করে জেল হাজতের পাঠায়। অভিযুক্ত ওই ব্যাংক কর্মকর্তার মো. ইমদাদুল হক এমদাদ। তিনি রাজশাহীর বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি ডিরেক্টর (সঞ্চয়পত্র) হিসেবে কর্মরত।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৯ সালের ২০ এপ্রিল মমতাজ বেগমের সঙ্গে ইমদাদুল হকের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই আসামী মমতাজের কাছে যৌতুক দাবী করে আসছে। এছাড়া বেতনের টাকা নিজের কব্জায় নিতে স্ত্রীকে প্রায় সবসময় অত্যাচার করতো। এরমধ্যে তাদের ঘরে দু’টি সন্তান আসে। এই সন্তানদের কথা চিন্তা করে ৩০ বছর একসঙ্গে সংসার করেছেন। মমতাজ নিজের উর্পাজনের টাকায় ২০০৯ সালে রাজশাহীর ছোটবনগ্রাম এলাকায় একটি বাড়ি করেন। এ বাড়ি করার পর থেকেই এমদাদ তার স্ত্রীর উপর নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দেন। বাড়ি তার নামে লেখে না দিলে তাকে তালাক দেয়ার হুমকিও দেয়। এতে রাজি না হওয়ায় মমতাজের মায়ের কাছে ১০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন। সেখানে ব্যর্থ হয়ে এক পর্যায়ে ওই বাড়ির তিনতলায় এক রুমে আলাদাভাবে বসবাস শুরু করেন ইমদাদ।
মতাতাজ বেগম আরও অভিযোগ করেন, ওই বাড়িতে অবস্থানকালে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন মহিলার পিয়নের সঙ্গে অনৈতিক শারীরিক সর্ম্পক গড়ে তোলেন। যা ব্যাংকসহ পুলিশের তদন্তে প্রমাণিত। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ৮টার দিকে ওই পিয়ন মহিলাকে নিয়ে তিনি বাড়িতে আসেন। স্ত্রী মমতাজ বাড়িতে ঢুকতে বাধা দিলে ১০ লাখ টাকা এবং বাড়ি তার নামে রেজিস্ট্রি করে দিতে বলেন। না হলে এ পিয়নকে বিয়ে করার হুমকি দেন।
এক পর্যায়ে জোর করে ওই মহিলাকে নিয়ে তিনতলায় অবস্থান করতে চাইলে স্ত্রী আবার বাধা দেন। সেখানে স্ত্রীকে প্রচণ্ড মারধর করেন। তার চিৎকার শুনে প্রতিবেশিরা তাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ভর্তি করান। মেডিকেলে তিনি চারদিন চিকিৎসাধীন ছিলেন। এরপর স্ত্রী সন্তানদের বাড়ি থেকে বের দিতে চেষ্টা চালায় ওই ব্যাংক কর্মকর্তা। এতে ব্যর্থ হয়ে নিজ স্ত্রী ও সন্তানের পেছনে এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের লেলিয়ে দেন।
নিজের জীবন ও সন্তানদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে গত মে মাসের ২৮ তারিখ রাজশাহী নারী ও শিশু নির্যাতন টাইব্যুনাল-১ একটি মামলা করেন মমতাজ। আলালতের নির্দেশে মামলাটি প্রথমে মহিলা সংস্থা তদন্ত করে। সেই তদন্তে প্রকৃত না আসায় বিবাদী তদন্তে নারাজী দেন। এরপর আদালত পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) অধিকতর তদন্তের জন্য নির্দেশ দেয়।
সেই তদন্তে স্ত্রীকে শারীরিক নির্যাতন, সন্তানদের হত্যার হুমকিসহ প্রায় সব অভিযোগের প্রমাণ পায়। তদন্ত প্রতিবেদন আদালত গ্রহণ করে ইমদাদকে দুই মাসের অস্থায়ী জামিন দেন। এরপর তিনি সন্ত্রাসী নিয়ে মামলা প্রত্যাহারের জন্য নানাভাবে হুমকি দেয়া শুরু করে। এরপর বুধবার আদালতে দুই সন্তান এমন সাক্ষ্য দেয়ায় পর অস্থায়ী জামিন বাতিল করে তাকে জেল হাজতে পাঠায়।
এ ব্যাপারে মমতাজ বেগম বলেন, এজাহারে পারিবারিক নির্যাতনের অনেক বিষয় এড়িয়ে গেছি। সন্তানদের কথা চিন্তা করে ৩০ বছর আমি অনেক সহ্য করেছি। কিন্তু সম্প্রতি আমার উপর নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়ায় বাধ্য হয়ে মামলা করেছি। তার ভয়ে ছেলে কলেজ যাওয়ার পর্যন্ত বন্ধ করে দিয়েছে। তার জন্য আমার ও সন্তানদের জীবন হুমকির মুখে।
মতিহার বার্তা ডট কম – ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.